পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার আজ বৃহস্পতিবার *প্রথম আলোকে* জানান, রাত ৩টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তাঁরা। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হয়, যার ফলে তারা আগুন নেভাতে পারেননি। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে তারা আবার ঘটনাস্থলে যান এবং দেখেন এজলাস পুড়ে গেছে। এরপর তাঁরা ফিরে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে বিভিন্ন সময়ে আদালতের এজলাস ভাঙচুর করা হলেও আগুন দেওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
ওই রাত একটার দিকে অস্থায়ী বিশেষ আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
আজ এই আদালতে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের একটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। মাদ্রাসা মাঠে আদালত স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবি করছেন। অবরোধের কারণে আদালতের সামনের সড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের চকবাজার অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান *প্রথম আলোকে* জানান, শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর তারা সড়ক থেকে সরে যান। শিক্ষার্থীরা আদালতের বিচারকের সঙ্গে তাদের দাবি নিয়ে কথা বলতে পারবে—এ আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত এবং আদালত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিচারক আদালতে উপস্থিত হয়েছেন।
মাহফুজুর রহমান আরও জানান, এর আগেও আদালতের এজলাস ভাঙচুর করা হয়েছিল।
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একদল লোক মাঠের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে অস্থায়ী বিশেষ আদালতের দরজা ভেঙে ফেলে। তারা ভেতরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মাঠে থাকা ফোম ও প্লাস্টিকের চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অস্থায়ী এই আদালত ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে। সেই বিদ্রোহে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। সব মিলিয়ে ৭৪ জন নিহত হন এবং সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালত ও উচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করেছে। তবে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।