২০১৫ সালে, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও বিএনপি নেতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ (এসএইচবি) নামক কথিত জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়ন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তিনি ১০ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। গ্রেপ্তারের আগের ও পরের ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিয়ে তিনি *বাংলাদেশ প্রতিদিন* এর সাথে কথা বলেছেন।
শাকিলা ফারজানা জানান, ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট র্যাবের একটি দল ‘মক্কেল’ পরিচয়ে তার বাসায় আসে এবং তাকে ‘জরুরি’ আলোচনার কথা বলে বাসা থেকে নিয়ে যায়। গাড়িতে তোলা হওয়ার পর চোখ বাঁধা হয় এবং তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারেননি তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তখন থেকে যে নির্যাতন সহ্য করেছেন, তা বর্ণনাতীত। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে যে আচরণ করা হয়েছে, তা ছিল অত্যন্ত অমানবিক। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি ‘জাস্ট শুট মি’ বলে তাদের কাছে আবেদন করেছিলেন।
যতটুকু জানানো হলো, কেন তাকে টার্গেট করা হয়েছিল, সে বিষয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বলেন, তিনি বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়েছেন, কিন্তু কখনো তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নিজেই তাদের আইনি খরচ বহন করেছেন। এ কারণে তার এই কাজটি সরকার বিরোধী হিসেবে দেখা হয়েছিল। তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তার মামলার তালিকা তৈরি করেছিল এবং এর ফলস্বরূপ তাকে শিকার করা হয়।
জঙ্গি অর্থদাতা হিসেবে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাকিলা ফারজানা জানান, ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন আদায়ে তিনি সহায়তা করেছেন, যা তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতীদের জামিন করানোর জন্য তাকে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তবে জামিনের জন্য তাদের কিছু অগ্রিম অর্থ দেওয়া হলেও অনেক সময় তাদের প্রত্যাশিত সময়ে জামিন করাতে না পারার পর তিনি সেই টাকা ফেরত দেন। কিন্তু এই টাকা ফেরতের প্রমাণপত্র দিয়ে তাকে ‘জঙ্গি অর্থদাতা’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
শাকিলা ফারজানা আরও বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির চট্টগ্রাম মহাসমাবেশের সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি গায়েবি মামলা করা হয়, যেখানে তিনি মনিরুজ্জামান ডনের জামিন করান। এখন তার মনে হয়, তার জামিন করানোর বিষয়টি পরে রহস্যজনকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কারাগারে কাটানো সময়ের বর্ণনা দিয়ে শাকিলা বলেন, ‘মিথ্যা’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি ১০ মাস ৮ দিন কারাগারে ছিলেন। প্রথম দিন তাকে ৫৬ জনের একটি নারী ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল, যেখানে মাদক ব্যবসায়ী ও খুনের আসামি ছিলেন। ভয় ও অপমানে, প্রথম তিন মাসে তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তার বাবা স্ট্রোক করেন তার গ্রেপ্তার হওয়ার পর। এই দীর্ঘ সময়টি ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।