রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার জন্য অর্থনীতি, অভিবাসন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে, বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অর্থনৈতিক দিকের উপর গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, এবং দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহু ক্ষেত্রে গঠনমূলক। ফলে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, কম দামের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। মোটমাটে, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অফ টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানি ৪ শতাংশ কমেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৯.১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫.১৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং দুদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ও দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তিও করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল ৪৬০ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠকে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, তাই তিনি ব্যবসায়িক দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। যদি চীনা পণ্যের উপর ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে অনেক মার্কিন বিক্রেতা বাংলাদেশের মতো দেশে পোশাক সোর্সিং স্থানান্তর করতে আগ্রহী হবে। সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, "ট্রাম্পের আসার ফলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ওপর বিশেষ কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ট্রাম্প তার নির্বাচনে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে বেশি মনোযোগী, তাই তিনি বাংলাদেশকে উপেক্ষা করবেন না।"
একসময় বাংলাদেশ ছিল ভারতবেষ্টিত একটি ছোট দরিদ্র দেশ, তবে বর্তমান সময়ে দেশটির ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামগ্রিক উন্নয়ন বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। বঙ্গোপসাগরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ, এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতির কারণে বাংলাদেশ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যার দিকে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মন্তব্য করেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সংকটের মধ্যে রয়েছে, এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আমাদের জন্য এটি শিক্ষণীয়, কারণ আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও যদি অস্থিতিশীল হয়ে যায়, তাহলে আমরা সংকটে পড়তে পারি।” তিনি আরও বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয়দের ভোট পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। তবে আমার মনে হয় না এর কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে, কারণ ট্রাম্প বাংলাদেশ কোথায় সেটাও সঠিকভাবে জানেন না।”