খাদ্য মন্ত্রণালয় বর্ধিত খাদ্য ভর্তুকি এবং চাল আমদানির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত ৪,১৫০ কোটি টাকা চেয়েছে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) থেকে চাল ও আটা সংগ্রহ করছে বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রাক্কলন করেছে যে, খাদ্য ভর্তুকির বাজেট মূল বরাদ্দের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বাড়বে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূল বাজেটে খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির ভর্তুকি বাবদ ২,০০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে ওএমএস ব্যবস্থায় চাল ও আটার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। এজন্য সংশোধিত বাজেটে এই ভর্তুকির পরিমাণ ৩,৫০৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একইভাবে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে মূল বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৩,২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এটি বাড়িয়ে ৩,২৯০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এতে মোট খাদ্য ভর্তুকি বাজেট ৬,৭৯৬ কোটি টাকা হবে, যা মূল বরাদ্দের তুলনায় ১,৫৩২ কোটি টাকা বেশি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "ওএমএসের ডিলারদের যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, চাহিদা তার দ্বিগুণ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ওএমএসের দোকান বা ট্রাকে ক্রেতারা চাল ও আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এজন্য বাড়তি সরবরাহ করতে হচ্ছে। এতে ভর্তুকি বেশি লাগবে।"
তিনি বলেন, "প্রতিকেজি চালে ২০ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়।"
চাল আমদানির বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানির জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২,৮৯৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬,২৭০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এটির মধ্যে গত অর্থবছরের আমদানি দায় পরিশোধের জন্য ৪৩৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
তবে, গম আমদানির জন্য বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, কারণ এখানে ব্যয় কমার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল বাজেটে গম আমদানির জন্য ২,৮৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ২,১৪৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি খাদ্য মজুদে ৭,৯২,৫৬০ টন চাল এবং ৪,১৭,৯১৭ টন গম রয়েছে।
সরকারি সংগ্রহের তথ্য অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২,৪৯,৪৭২ টন চাল অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, "দেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। নিরাপদ মজুদ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের বিনিময় হারও বেড়েছে। এজন্য এ খাতে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।"
ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে
ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে খাদ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ওএমএসে প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতাকে ৫ কেজি চাল ও আটা দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর এবং শ্রমঘন চার জেলা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী; ১০টি সিটি করপোরেশন এবং দেশের সব জেলা সদর ও পৌরসভায় ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ট্রাক ও দোকান মিলিয়ে মোট ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্র ৯১২টি।
শহর বাদ দিয়ে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫০ লাখ পরিবারের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল—এই পাঁচ মাসে এই কার্যক্রম চলে। এর আওতায় একটি পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল পায়।
চলতি অর্থবছরে ৭.৪০ লাখ টন চালের বরাদ্দ রয়েছে এই কর্মসূচিতে।
খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওএমএসের মাধ্যমে ৩,৭০,২২৬ টন চাল ও ২,০৭,৫৯১ টন গম, মোট ৫,৭৭,৮১৭ টন খাদ্যশস্য বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আশানুরূপ আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় শহরের নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএসের পণ্য কেনার জন্য ছুটছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছে না সরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ। এর বিপরীতে, নভেম্বরে মজুরি হার বেড়েছে ৮.১০ শতাংশ।