সুলতানুল আরেফিন
স্নাতক সম্পন্ন ছাত্র এবং গবেষক
ইংরেজি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস
এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (IUBAT), ঢাকা।
ইউনুস সরকার যখন কাউন্টডাউনের প্রসঙ্গ তুললেন কিছু সরকারি কর্মচারী বা অফিসারের সামনে, তখন কিছু কর্মকর্তাই উল্টো নিজেদের কাউন্টডাউনের মুখে পড়ে গেলেন।
কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আচরণ জনমনে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। যেমন সম্প্রতি, লালমনিরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, কারণ তিনি সামাজিক মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করেছিলেন।
শনিবার, তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে আরও লিখেছেন, 'আপনার জন্য কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে, মহাশয়।' এমন কিছু কর্মকর্তার অবস্থান রয়েছে, যারা নিজেদের কর্মরত সরকারের প্রধানকেই অবৈধ বলে উল্লেখ করছেন। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক মনোভাবের প্রকাশ, যা সরকারি কর্মচারীদের জন্য নীতিমালার বাইরে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কর্মকর্তা সরকারি নীতিমালা মানতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাদের উচিত রাজনীতিতে যোগদান করা। শুধুমাত্র সাময়িক বরখাস্ত করা যথেষ্ট নয়; বরং তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন, এসব কর্মকর্তার নিয়োগে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা অনৈতিক কার্যকলাপ জড়িত ছিল কিনা। একজন সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব হলো নীতিমালার অধীনে থেকেই কাজ করা।
বাকস্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার। তবে, যদি কোনো কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা, যেমন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যা অস্বীকার করেন, তাহলে এটি শুধু বাকস্বাধীনতার বিষয় নয়, বরং তার অবস্থান ও মানসিকতার ওপর প্রশ্ন তুলতে পারে। যেখানে সেনাপ্রধান নিজেই বলেছেন যে, জুলাই-আগস্টের সব গণহত্যার বিচার হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত সরকারি অফিসে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। অতীতের কর্মকাণ্ড ও জনমতের ভিত্তিতে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আমরা এমন একটি প্রশাসন চাই যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়ে, নিরপেক্ষভাবে দেশের সেবা করবেন। প্রশাসনের ডিসি ও এসপি যেন কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না হয়ে, জনগণের প্রকৃত সেবক হিসেবে কাজ করেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
যদি আমরা বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ধারা পর্যবেক্ষণ করি, তবে দেখতে পাই, আজকের ম্যাজিস্ট্রেটই আগামীর ডিসি হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের সংস্কার করবে এবং পরে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে। কিন্তু যদি তারা এখন থেকেই রাষ্ট্রের সংস্কারে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের এই প্রতিশ্রুতি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত রাষ্ট্রের সংস্কারের প্রয়োজনীয় দিকগুলো বিবেচনা করে, সবার আগে সরকারি কর্মকর্তাদের মন থেকে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।