অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একইভাবে, জাতীয় নাগরিক কমিটিও সরকারের কিছু কার্যক্রমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষত, উপদেষ্টা পরিষদে দুজন নতুন উপদেষ্টার নিয়োগে তারা সন্তুষ্ট নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করেছেন এবং রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার ও তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে কি না। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের বক্তব্যে ভিন্নতা থাকলেও সবাই রাষ্ট্র সংস্কারে নিজেদের ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তাঁদের লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সরকারকে জনস্বার্থে সঠিক পথে রাখতে চাপ দেওয়া এবং নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা জানান, দ্রব্যমূল্যসহ কিছু বিষয়ে সাধারণ মানুষের সন্তুষ্টি নেই এবং সরকারের আরও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন। বিশেষত, ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়েই উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করা হয়, যা অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলতে পারে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সংগঠনে রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ছাত্র আন্দোলনটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এবং নাগরিক কমিটি পেশাজীবীকেন্দ্রিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত সেপ্টেম্বরে উভয় সংগঠন বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানায় এবং সময়সীমা বেঁধে দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা জানান, তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি সরকারে থাকলেও তাঁরা সরকারের অংশ নন এবং নিজেদের স্বাধীন সত্তা হিসেবে প্রমাণ করতে চান। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা পূরণই তাদের মূল লক্ষ্য এবং সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থন করলে জনগণের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, সরকারের সঙ্গে তাঁদের কোনো দ্বন্দ্ব না থাকলেও, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ছাত্র-জনতার মতামত নিচ্ছে না এবং তথ্য আদান-প্রদানে স্বচ্ছ নয়। এ কারণে সরকার ও তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।