টিভি সিরিজকেই নাকি পরবর্তীতে ওটিটিতে সিরিজ আকারে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাও ২০২১ সালের নভেম্বরে শুট করা। তার ওপর আস্ত ২০ পর্বের দীর্ঘ সিরিজ। এই তিনটি কারণে 'চক্র' নিয়ে আমার খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। যদিও 'আদম' পরিবার নিয়ে বরাবরই বেশ উৎসুক ছিলাম।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও গত পরশু দেখতে বসলাম। নাওয়া খাওয়া ভুলে ৭ পর্ব টানা দেখে ফেললাম। বয়স হয়েছে, এখন আর কোনো 'হরর' কনটেন্টে ভয় পাইনা। হলিউডের কাজেও না। তবে 'চক্র' দেখে গা ছমছমে অনুভূতি হলো। রাত ঘুমে দু:স্বপ্ন দেখলাম। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে এপার্টমেন্ট-এর এক বুজুর্গের মৃতদেহ দেখলাম। আর গতকাল রাতে সিরিজটি দেখতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। এই অনুভূতির ব্যাখ্যা শব্দ দিয়ে বোঝানো মুশকিল।
আমাদের দেশে এত সাহসী, এত সুন্দর স্ক্রিপ্টের কাজ হয়েছে, ভাবতে গর্ব হয়েছে। প্রথম ধারাবাহিক নির্মাণেই ভিকি জাহেদ চূড়ান্ত সফল হলেন। এ ধরনের গল্প নির্বাচন ও শৈল্পিক উপস্থাপনের জন্য দম লাগে। মিতু বার বার বলছিল: ভিকি জাহেদ কি নরমাল কেউ? এত গভীরে তিনি কিভাবে ভাবতে পারেন? সিরিজের ইন্ট্রো টাইটেল কার্ড, মিউজিক থেকে রেফারেন্স ছবি, ফুটেজ ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে ধারাবাহিকটিকে। ২০ পর্ব শেষ হবার পর মনে হয়েছে, কবে সিজন-২ দেখবো? এখানেই 'চক্র'র সাফল্য।
২০ পর্বের দীর্ঘ জার্নিতে (২০২১ থেকে নানান সময়ে শুটিং হওয়া) তাসনিয়া ফারিন-তৌসিফ মাহবুব পুরোটা সময় জুড়ে এক্সপ্রেশন ধরে রেখেছিলেন। পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। এক কথায় অনবদ্য। লুবনা আর হুমায়ূন চরিত্র দুটি তাদের অন্যতম সেরা কাজ হয়ে থাকবে।
এই সিরিজের পার্শ্ব চরিত্রগুলোও প্রাণ দিয়েছে ভীষণভাবে। আলাদা করে বললে শাহেদ আলী দারুণ। অনেকদিন পর কোনো চরিত্রে প্রাণ খুলে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এ কে আজাদ সেতু বরাবরের মতই দুর্দান্ত। যে কোনো গল্পের যে কোনো মাপের/ধাচের চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন তিনি। মায়ের চরিত্রে রেশমা আহমেদ-ও ভীষণ বিশ্বাসযোগ্য, সাবলীল। রুহানের অনুভূতি গুলো শূণ্যতা তৈরি করেছে আমার বুকের ভেতর।
চিত্রগ্রহণ, আলো, শিল্প নির্দেশনা, লোকেশন, পোশাক- সবকিছুই আমাদের অন্য একটা জগতে নিয়ে গেছে।