ট্রান্সকম গ্রুপের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিজাত শহরগুলোতে পাচারের টাকায় কেনা হয়েছে। গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান এবং তাঁর ছেলে, ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন যারাইফ আয়াত হোসাইনের নামে অন্তত ১৯ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তারা দামি গাড়িরও মালিক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাঁরা দেশ থেকে অর্থ পাচার করে দুবাইসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজাত শহরগুলোতে বিপুল সম্পদ কিনেছেন।
তাদের এই অ্যাপার্টমেন্টটি দুবাইয়ের অত্যন্ত পরিচিত এবং আভিজাত্যে মোড়ানো কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরা-এ অবস্থিত। পাম জুমেইরার ক্রিসেন্ট রোডের বালকিস রেসিডেন্সে সিমিন রহমান এবং তাঁর ছেলের অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৫০ লাখ ৭০ হাজার দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদেশে এই বিলাসবহুল সম্পদ কেনার বিষয়ে কোনো তথ্য জানে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান এই অনুমোদন পেয়েছে। তবে এ তালিকায় ট্রান্সকম গ্রুপের নাম নেই। সিমিন রহমান এবং তাঁর ছেলে যারাইফ আয়াত হোসাইনের নামে বিদেশে থাকা সম্পত্তি অবৈধ কিংবা পাচারের টাকায় কেনা বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিদেশে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে ট্রান্সকম গ্রুপের কোনো ব্যবসা এই খাতগুলোতে নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যদি বাংলাদেশি কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী গ্রুপ বিদেশে অর্থ পাঠাতে চান, তাহলে তাঁদের অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। একইভাবে, কোনো ব্যক্তি যদি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে ব্যয় করেন, তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত ট্রান্সকম গ্রুপের কোনো বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেয়নি, এবং বিদেশে তাদের সম্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু জানে না। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান চালাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন, যেটি একবারে বা একাধিকবার নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়।