মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) মংডু শহরটি দখল করার দাবি করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার পুরো অংশই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। দখলের পর তারা নাফ নদীর আরাকান জলসীমায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাসব্যাপী সংঘর্ষের পর, ৮ ডিসেম্বর মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতী জানায়, এই খবর ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। এদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বিজিবি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশি জেলেরা এবং সব ধরনের নৌযানকে মাইকিং করে ওই অঞ্চলে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে টেকনাফ সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ চলছে।”
ইউএনও আরও বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি যে, আরাকান আর্মি টেকনাফ সীমান্তের ওপারের অঞ্চলটি পুরোপুরি দখল করেছে। রবিবার থেকে তারা নাফ নদে সব নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা টেকনাফের মাছ ধরার ট্রলার মালিকদের সতর্ক করেছি এবং এই মুহূর্তে নাফ নদী খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।” তিনি আরও জানান, সীমান্তে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
মিয়ানমারের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আরাকান আর্মি দাবি করেছে, তারা ৮ ডিসেম্বর জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নং ৫-কে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যেটি মংডু শহরের কাছে অবস্থান করছিল। তারা জানায়, তারা জান্তা বাহিনী ও তাদের সহযোগী রোহিঙ্গা মিলিশিয়া গ্রুপগুলো, যেমন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ওই বাহিনীগুলো পালিয়ে গেছে।
টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, গত কয়েকদিনে মংডুতে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়েছে এবং গোলাগুলির শব্দে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কিত। তারা বলছেন, আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে মংডু শহরটি দখল করে ফেলেছে এবং জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু এলাকা এখন তাদের দখলে।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ জানান, “আমরা বাংলাদেশ জলসীমানায় কাউকে ঢুকতে দেব না। জালিয়ার দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত নাফ নদী এবং সাগরের আমাদের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলেদেরও জানানো হয়েছে যে তারা যেন জলসীমা অতিক্রম না করে।”
টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, “রাখাইনের পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তে টহল আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেকোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
মিয়ানমারের গণমাধ্যমে আরো বলা হয়েছে, ৯ ডিসেম্বর মংডুতে লড়াইয়ের পর, আরাকান আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ ৮০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও জান্তা সেনাকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরাকান আর্মি মে মাসের শেষ থেকে মংডুতে হামলা শুরু করে এবং ছয় মাসের মধ্যে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা দাবি করেছে, বাংলাদেশ সীমান্তের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, মংডু, বুথিডং এবং শিন এলাকা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।