তাহসিন ও কাওসার: একাধিক শিশু অপহরণের গল্প
ঢাকার হাজারীবাগে তাবাসসুম (৬) ও তাহসিন (২ বছর ৪ মাস) নামের দুই ভাই-বোন তাদের বাসার সামনে খেলছিল। এক নারী বোরকা পরে এসে শিশুদের নানির সঙ্গে আলাপ জমায়। নানি বাসার ভেতরে গেলে, ওই নারী শিশু দুটিকে দোকানে নিয়ে গিয়ে চিপস কিনে দেয়। তাবাসসুম চিপস নিয়ে বাসায় ফিরলেও, তাহসিনকে কোলে নিয়ে চলে যান সেই নারী। ২১ মার্চের এই ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।
তাহসিনের বাবা নুরুল ইসলাম হাজারীবাগ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। প্রথমে তদন্ত শুরু করেন থানার পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম। পরে মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার ১০ দিন পর ডিবি পুলিশ তাহসিনকে উদ্ধার করে।
মেডিকেল কলেজের টয়লেটে আরেক শিশু উদ্ধার
৩ নভেম্বর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টয়লেটের বালতিভর্তি পানিতে এক নারী আড়াই বছরের এক শিশুকে চুবাচ্ছিলেন। ঘটনাটি দেখে আনসার সদস্যরা শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, শিশুটির নাম মো. কাওসার। ওই নারী মেরিনা আক্তার মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। শিশুটির পরিবারের খোঁজ পেয়ে তাকে ফেরত দেওয়া হয়।
মুনতাহার ট্র্যাজেডি এবং অন্যান্য ঘটনা
সব শিশু তাহসিন ও কাওসারের মতো ফিরে আসে না। সিলেটের মুনতাহা (৫) নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর তার লাশ উদ্ধার হয়। যশোরের সাদিয়া খাতুন (৭) নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ১৫ নভেম্বর আজিমপুরে এক অপরাধী চক্র আট মাস বয়সী এক শিশুকে অপহরণ করে, যা মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
শিশু অপহরণের চিত্র
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশু অপহরণের ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯% শিশু এখনও উদ্ধার হয়নি।
সমাধানের দিকনির্দেশনা
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক মনে করেন, শিশুদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তিনি বলেন, “অনেক সময় উদ্ধার না হওয়া শিশুদের হত্যা করা হয়, অথচ পুলিশ এগুলো ‘নিখোঁজ’ হিসেবেই থেকে যায়।”