চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: ৫.৪ মিলিয়ন বাংলাদেশি চাকরি হারাতে পারে
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশে প্রায় ৫৪ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন, এমন তথ্য প্রকাশ করেছে সরকারি সংস্থা এটুআই এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানা ধরনের আশঙ্কার পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সমস্যা মোকাবেলা ও সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগাতে সরকারের একটি নতুন কৌশলপত্র তৈরি করা প্রয়োজন।
এই বিষয়টি সম্প্রতি ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের এসএমইদের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচনা হয়, যা এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক-ইবার্ট-স্টিফটাংগ (এফইএস) বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৩ নভেম্বর আগারগাঁও পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উল্লাহ। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কাজী মুহাইমিন-উস-সাকিব।
প্রধান আলোচনায় এটুআই এবং আইএলওর গবেষণার ভিত্তিতে বলা হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ২৭ লাখ, ফার্নিচার খাতের প্রায় ১৪ লাখ, কৃষিপণ্য ও পর্যটন খাতের ১২ লাখ, এবং চামড়াশিল্পের এক লাখ কর্মী—মোট ৫৪ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
এছাড়াও সিপিডি এবং পিআরআই-সহ অন্যান্য গবেষণা সংস্থার তথ্যও আলোচনায় তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়, দক্ষ কর্মী এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে দেশের এসএমই খাতও সংকটে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এসএমই খাতকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই খাতের পণ্য রপ্তানি, নতুন ব্যবসায়িক মডেল এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
২০২৩ সালে এটুআইর উদ্যোগে ১৬টি সেক্টরের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। সেক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে রেডিমেড গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ফার্নিচার, কৃষিপণ্য, ট্যুরিজম, লেদার, সিরামিক, হেলথকেয়ার, আইসিটি, কনস্ট্রাকশন, রিয়েল এস্টেট, ট্রান্সপোর্টেশন, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনস্যুরেন্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া এবং ইনফরমাল এসএমই। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০৪১ সাল নাগাদ এসব সেক্টরে ৭০ লক্ষাধিক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন, তবে নতুন প্রযুক্তি এবং পেশায় প্রায় ১.১ কোটি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যতে আসন্ন নতুন পেশাগুলোর মধ্যে থাকবে এআই স্পেশালিস্ট, ব্লকচেইন এক্সপার্ট, থ্রিডি ডিজাইনার, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ম্যানেজার, এআর ও ভিআর ডেভেলপার, অটোনমাস ভেহিকল টেকনিশিয়ান, ড্রোন সার্ভেয়ার, সাইবার ফিজিক্যাল কন্ট্রোল সিস্টেম অপারেটর এবং রোবট ডক্টর।