পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে লাঞ্ছিত করেছেন মহিলা দলের নেত্রীরা।
কিছু নেত্রী তাঁকে মারধর করছেন, কেউ চুল ধরে টানছেন, আবার কেউ মুখ চেপে ধরছেন। এই পরিস্থিতিতে, সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেত্রী ‘মুজিব তোমার স্মরণে, ভয় করি না মরণে’ এবং ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই তাঁকে মারধর করেন মহিলা দলের দুই নেত্রী।
জান্নাতুল ফেরদৌস, যিনি পিয়া নামেও পরিচিত, রাজশাহী মহিলা কলেজে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। তিনি রাজশাহী কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গত ৭ সেপ্টেম্বর, রাজশাহী কলেজের ইসলামের ইতিহাস (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী মাসুদ প্রথম আলোকে জানান, জান্নাতুল ফেরদৌস ওই মামলার ৫৮ নম্বর আসামি। তিনি আজ পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আসেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এ খবর জানতে পেরে পুলিশও ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিকেলেই তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
জান্নাতুল ফেরদৌসকে গ্রেপ্তারের সময়ের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের দুই নেত্রী হলের কলাপসিবল গেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বাইরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় থাকবে না’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের পেছনে পুলিশ ছিল। এক পর্যায়ে মহিলা দলের দুই নেত্রী পরীক্ষার হলের ভেতরে ঢুকে পড়েন, যেখানে তখনো অন্য পরীক্ষার্থীরা বসে ছিলেন। এ সময় একজন নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে চড় মারছিলেন। জান্নাতুল জানতে চান, ‘আমার অপরাধ কী?’ এক পর্যায়ে তিনি পরীক্ষার হলের মেঝেতে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর পুলিশ যখন তাঁকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করে গাড়িতে তুলছিল, তখন তিনি ‘মুজিব তোমার স্মরণে, ভয় করি না মরণে’ এবং ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তখন মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক নাজরিন আক্তার ওরফে বীথি তাঁর মুখ চেপে ধরেন, সঙ্গে ছিলেন শিউলী নামের আরেক মহিলা দলের নেত্রী। ভিডিওতে ঘটনাস্থলে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর আহমেদকেও দেখা গেছে।
জান্নাতুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় সেখানে অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ যখন গাড়ি নিয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছিল, তখন অনেকেই ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন।
ছাত্রলীগ নেত্রীকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক নাজরিন আক্তার বলেন, ‘এই পিয়া শিশু পাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী। এর সিন্ডিকেটের শেষ নেই। যত খারাপ মেয়ে, সব তার বান্ধবী। কিশোর গ্যাংয়ের লিডার সে। সে মেয়েমানুষ হয়ে নিজে গুলি করেছে।’ মহিলা দলের সদস্য শিউলী বলেন, ‘আমরা ৪ তারিখের মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। সে গুলি করেছে। এই পিয়া মাদক ব্যবসায়ী। তার মদদে মহিলা দল থেকে ছাত্রদল পর্যন্ত সবাইকে নির্যাতন করেছে। আমাদের পরীক্ষা দিতে দেয়নি। রাতে ঘুমাতে দেয়নি। আমরা তার কঠিনতম শাস্তি চাই।’
রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, কলেজে বিকেলের পালায় পরীক্ষা চলছিল। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসে জানান, ছাত্রলীগ নেত্রী এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং তিনি মামলার এজাহারনামীয় আসামি। অধ্যক্ষ তাঁদের পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি বলেন, পুলিশ ডাকতে চাচ্ছিলেন, তখনই বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলেন যে তাঁরা পুলিশে খবর দিয়েছেন। পুলিশ আসছে। পরীক্ষা শেষ হলে ওই নেত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।