চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যাকাণ্ডের মামলায় অন্যতম আসামি যুবলীগ কর্মী এইচ এম মিঠু। হামলার সময় তাঁর আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আন্দোলনে অস্ত্রধারী যুবলীগ কর্মী ও কিশোর গ্যাং নেতাকে আটক করা হয়েছে। তবে, থানায় সোপর্দ করার পর পুলিশ যাচাই করে জানায়, র্যাবের হাতে আটক ব্যক্তি এইচ এম মিঠু নন। আসলে তিনি কাজী জাহিদুল আলম ওরফে মিটু, পেশায় একজন গাছ ব্যবসায়ী, এবং তাঁর নামে থানায়র্যাবের হাতে আটক হওয়া কাজী জাহিদুল আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা এলাকায়। তিনি কাপ্তাই রাস্তার মাথায় একটি দোকানে গাছের ব্যবসা করেন। আজ র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) কাজী শরীফ উল আলমের সই করা একটি বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যা মামলার আসামি ও কিশোর গ্যাং নেতা এইচ এম মিঠুকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আটক করা হয়। গত ১৮ জুলাই মুরাদপুর এলাকায় এই আসামি ও তার সহযোগীদের গুলিতে আহত হন হৃদয়। ২৩ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হৃদয়ের বন্ধু আজিজুল হক চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন, যাতে এইচ এম মিঠুকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, এইচ এম মিঠু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির সহযোগী হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টিরও বেশি মামলা রয়েছে। আটককৃত কাজী জাহিদুল আলমকে র্যাব আসামি এইচ এম মিঠু বলে শনাক্ত করে থানায় হস্তান্তর করে। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে পুলিশ দেখতে পায়, তিনি প্রকৃত আসামি নন। পরে, র্যাবের পাঠানো আটক ব্যক্তির ছবির সঙ্গে প্রকৃত আসামি মিঠুর চেহারার মিল নেই বলে থানার পুলিশ স্বীকার করে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যাচাই করে দেখা গেছে যে, র্যাবের হাতে আটক ব্যক্তি প্রকৃত অস্ত্রধারী এইচ এম মিঠু নন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। ফলে, তাঁকে হৃদয় হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়নি। তবে, ব্যবসায়ীকে মারধরের একটি পুরোনো মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে, যদিও তদন্ত শেষে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওসি আফতাব উদ্দিন জানান, "র্যাব আমাদের কাছে যাকে দিয়েছে, তাকে আমরা গ্রেপ্তার দেখিয়েছি। প্রকৃত আসামি এইচ এম মিঠুকে ধরার জন্য অভিযান চলছে।"
আদালত সূত্রে জানা যায়, কাজী জাহিদুল আলমকে বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হয় এবং তাঁর আইনজীবী জানান যে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পরে, আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে।
জামিন পাওয়ার পর কাজী জাহিদুল আলম বলেন, "র্যাব আমাকে ধরে নিয়ে যায়, আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তারা আমাকে অস্ত্রধারী বলে থানায় দিয়েছে এবং মিডিয়ায় আমার ছবি প্রকাশ করেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।"
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, প্রকৃত আসামিকে বাঁচানোর কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা উচিত। কোনো মামলা নেই।