মাদারীপুরে দালালের ফাঁদে পড়ে কুদ্দুস ও সুজনের করুণ পরিণত
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুদ্দুস ব্যাপারী (৩৩) মালয়েশিয়ায় কাজ করতেন। ছয় মাস আগে ছুটিতে দেশে আসার পর স্থানীয় দালাল মনিরের প্রলোভনে ইতালিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানোর জন্য মনিরের সঙ্গে হয় ১৬ লাখ টাকার ‘বডি কন্ট্রাক্ট’।
ইউরোপে অবৈধভাবে ঢোকার অন্যতম প্রধান রুট হলো লিবিয়া। ছোট নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় প্রতিবছর বহু মানুষ প্রাণ হারান। দালালরা এই পথে চালু করেছেন ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ চুক্তি, যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত ইতালি পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
কুদ্দুস নিজের দুই বিঘা জমি ৪০ লাখ টাকায় মনিরের স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে লিখে দেন। দালাল মনির প্রথমে তাঁকে মিসরে পাঠান, সেখান থেকে লিবিয়া। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়ার বেনগাজি উপকূল থেকে একটি নৌকায় তাঁদের ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পরই নৌকাটি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়।
কুদ্দুসের ভগ্নিপতি সুজন হাওলাদারও মনিরকে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে একই পথে যাত্রা করেন। দুর্ঘটনায় সুজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্ত্রী মুন্নী বেগম। তিনি বলেন, “১৬ লাখ টাকা ধারদেনা করে দিয়েছিলাম। দালালদের কথা ছিল, যেভাবেই হোক সুজনকে ইতালি পৌঁছে দেবে। কিন্তু তারা মাঝসমুদ্রে ফেলে দিয়ে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।”
দালাল মনির শেখ স্থানীয়ভাবে ‘মাফিয়া মনির’ নামে পরিচিত। লিবিয়ায় থাকা তাঁর জামাতারা মানব পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। মনিরের স্ত্রীর নামে ইতোমধ্যে ৫ কোটি টাকার জমি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। লিবিয়া উপকূলে ২৩টি লাশ ভেসে আসার পর থেকে মনির আত্মগোপনে চলে গেছেন।